ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল সারা দেশ

রাত ৭টা ৫৫ মিনিটে হঠাৎ হালকা দুলুনি। খানিক বিরতি দিয়ে তীব্র ঝাঁকুনি। এরপর আতঙ্ক, হুড়োহুড়ি। ঢাকা-চট্টগ্রামসহ প্রায় সারা দেশে মৃদু থেকে মাঝারি ভূমিকম্পে এ আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।

গতকাল বুধবার রাতের এই ভূমিকম্পে চট্টগ্রাম শহরে নয়টি ও ফেনীতে একটি ভবন হেলে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। চট্টগ্রামে আতঙ্কে হুড়োহুড়িতে অন্তত ৫০ জন আহত হয়। ঢাকা, সিলেট, সুনামগঞ্জসহ দেশের কয়েকটি স্থানে অন্তত ৪৫ জন আহত হয়। তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির আর খবর পাওয়া যায়নি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণে রাজধানীর আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে ৪২০ কিলোমিটার পূর্বে মিয়ানমারের মাওলাইক এলাকায় এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল বলে জানা গেছে। এতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয়, আসাম, বিহার, দিল্লি, ওডিশা, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় এবং চীনের তিব্বতে ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে বলে বার্তা সংস্থা এএফপি ও পিটিআই জানিয়েছে।
ভূমিকম্পের কেন্দ্রে রিখটার স্কেলে এর মাত্রা কত ছিল, তা নিয়ে দুই রকম তথ্য জানা গেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে, এর মাত্রা ৭ দশমিক ২। আর যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ইউএসজিএ-এর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৯।
তবে কম্পনের তীব্রতা বাংলাদেশে কত অনুভূত হয়েছিল, তা বলতে পারেনি আবহাওয়া অধিদপ্তর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অবজারভেটরির পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, বাংলাদেশে ভূমিকম্পটির তীব্রতা ছিল চার থেকে পাঁচ। শক্ত ও লালমাটির এলাকায় এর তীব্রতা ধরা পড়েছে চার মাত্রায়। আর অপেক্ষাকৃত নরম মাটি ও জলাশয় ভরাট করে গড়ে ওঠা আবাসিক এলাকা এবং বহুতল ভবনগুলোতে পাঁচ মাত্রায় অনুভূত হয়েছে। ইউএসজিএস পর্যবেক্ষণেও ভূমিকম্পটির তীব্রতা পাঁচ মাত্রা উল্লেখ করা হয়েছে।
উৎপত্তিস্থল: মিয়ানমার 
মাত্রা: ৭.২ 
সময়: রাত ৭.৫৫ 
সূত্র: বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও আর্থ অবজারভেটরির পরিচালক হুিমায়ূন আখতার প্রথম আলোকে বলেন, ভূমিকম্পটি ৫০ সেকেন্ড স্থায়ী ছিল। তবে ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ভূগর্ভের ১৩৪ কিলোমিটার গভীরে। ফলে কম্পন কিছুটা কম অনুভূত হয়েছে। ভূগর্ভের ওপরের দিকে হলে কম্পন আরও বেশি অনুভূত হতো।
ভূমিকম্পের কারণে সারা দেশে তীব্র আতঙ্ক ও ভয়ের সৃষ্টি হয়। রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকার ভবন ও বাসাবাড়ি থেকে অধিবাসীরা বেরিয়ে পড়েন। আতঙ্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রসহ মোট তিনজন অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
ভূমিকম্পের সময় এবং এরপর প্রায় দুই ঘণ্টা দেশের বেশির ভাগ মোবাইল অপারেটরের সংযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। মোবাইল ফোন-নির্ভর বেশির ভাগ সেবা ভূমিকম্প -পরবর্তী দুই ঘণ্টা বিঘ্নিত হয়।
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূমিকম্পটির কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি স্থান ছিল টেকনাফ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম। সেখানে ভূমিকম্পের তীব্রতা রাজধানীর চেয়ে বেশি হতে পারে।
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মাকসুদ কামাল প্রথম আলোকে বলেন, এই ভূমিকম্পটি বাংলাদেশে কম অনুভূত হলেও আতঙ্ক বেশি হয়েছে। বিশেষ করে জলাভূমি ভরাট করে এবং নরম মাটির এলাকায় যেসব বহুতল ভবন হয়েছে, সেখানে দুলুনি বেশি অনুভূত হয়েছে। তাই ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুসরণ করে এবং জলাভূমি ভরাট না করে ভবন তৈরি করলে আতঙ্ক ও ক্ষতি দুটোই কম হবে।
Information : prothom-alo Desk

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন